নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের ৮৬৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার রাজস্ব ব্যয় সংবলিত প্রস্তাবিত বাজেট এবং ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের ৮৪৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। পাশকৃত এই বাজেটে গবেষণার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের ৪.৭ শতাংশ।
এর মধ্যে কয়েকটি অনুষদের গবেষণার সরঞ্জাম কেনা এবং কয়েকটি অনুষদ-বিভাগের ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি কেনা ও ল্যাব স্থাপনে ১৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া গবেষণা মঞ্জুরি হিসেবে রয়েছে ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং শিক্ষকদের গবেষণা ভাতা হিসেবে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সিনেটের চেয়ারম্যান ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান অধিবেশনে সভাপতিত্বে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সিনেটের এই মুলতবি অধিবেশনের আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) ও ভারপ্রাপ্ত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ সংশোধিত এই বাজেট উপস্থাপন করেন। পরবর্তী সময়ে অধিবেশনে এই বাজেট গৃহীত ও অনুমোদিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষা ও গবেষণার উৎকর্ষ সাধন, মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে নানাবিধ কর্মপ্রয়াস ও উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। উপাচার্য তার বক্তব্যে করোনাকালীন ও করোনাত্তোর সমস্যা মোকাবিলা করে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা প্রদান এবং শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মান নিশ্চিতকরার লক্ষ্যে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ক্রমান্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সামনের দিকে এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টি’-র জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রাথমিক বরাদ্দ রাখা হবে বলে উপাচার্য জানান।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে মার্চ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসগুলো কার্যত বন্ধ থাকায় যথার্থভাবে আর্থিক তথ্যাদি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন বিদায়ি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দীন। বাজেটের মুখবন্ধে তিনি বলেছেন, আর্থিক বিধিবিধান মেনে নির্ভুল বাজেট তৈরির সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে অনুমাননির্ভর তথ্যের ভিত্তিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনো বরাদ্দের সমন্বয় করা প্রয়োজন হলে বা কোনো তথ্যের পরিবর্তন প্রয়োজন হলে ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সমন্বয় ও সংযোজন করা হবে।
অন্যান্য খাতের বরাদ্দ : নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তুত করা বাজেটে শিক্ষকদের বেতন খাতে ১৩৮ কোটি ৫০ লাখ (বাজেটের ১৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ) ব্যয় ধরা হয়েছে। এ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন খাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় হবে যথাক্রমে ৬৩ কোটি ৫০ লাখ (বাজেটের ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ) ও ৬৫ কোটি টাকা (বাজেটের ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ)। শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভাতা বাবদ সহায়তা হিসেবে বিশ^বিদ্যালয়ের ব্যয় হবে ২১৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা (বাজেটের ২৪ দশমিক ৮১ শতাংশ)।
এ ছাড়া শিক্ষকদের বিভিন্ন গবেষণা-প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক প্রকাশনা জার্নালে প্রকাশ করতে সহায়তা ও শিক্ষার্থীরা যাতে দেশে-বিদেশে শিক্ষা-বিনিময় করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে দুটি নতুন খাত সৃষ্টি করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে। এর মধ্যে প্রথমটির জন্য সংশোধিত বাজেটে ২০ লাখ ও আগামী প্রস্তাবিত বাজেটে ১ কোটি টাকা এবং দ্বিতীয়টির জন্য সংশোধিত বাজেটে ৫০ লাখ ও আগামী অর্থবছরের জন্য ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়ার চিন্তা : বাজেট উপস্থাপনকালে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হলো ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা কার্যক্রম। কিন্তু করোনা সংক্রমণের মধ্যে এ কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ রয়েছে, কিন্তু ব্যয় অব্যাহত রয়েছে। সুতরাং বাস্তবে সরকারি তথা জনগণের অর্থের যথার্থ ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, বিভিন্ন মহল হতে অনলাইন ক্লাস শুরুর প্রস্তাব আসছে। এটির প্রস্তুতি হিসেবে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে ২০ হাজার টাকা করে স্মার্টফোন কেনার জন্য অনুদান দেওয়া হয় তবে ৪০ কোটি টাকার প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সরকারের কাছ থেকে ৫০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দের আবেদন করা যেতে পারে।